মুনতাহা হত্যা মামলার চার আসামি ৫ দিনের রিমান্ডে
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৪৫:১৬
শিশু মুনতাহা আক্তার জেরিন (৬) হত্যার দায়ে গ্রেপ্তার সাবেক গৃহশিক্ষিকাসহ চার আসামির ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে।
সোমবার (১১ নভেম্বর) বেলা ২টার দিকে তাদের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তোলা হয়।
পরে ৭ দিনের রিমান্ড চাওয়া হলে বিচারক কাজী মো. আবু জাহের বাদল ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
সিলেট জেলা জজ আদালতের ইন্সপেক্টর জমসেদ আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, থানা পুলিশ আদালতে আসামিদের ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে রহস্য উদঘাটনের স্বার্থে বিচারক কাজী মো. আবু জাহের বাদল ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
তিনি বলেন, মুনতাহা নিখোঁজের পর অপহরণ মামলা হয়। মরদেহ উদ্ধারের পর হত্যার ধারা যুক্ত হয়। অপহরণ ও হত্যার ঘটনায় মামলাটি তদন্ত করছে থানা পুলিশ।
এর আগে মুনতাহার বাবা শামীম আহমদ শনিবার (৯ নভেম্বর) কানাইঘাট থানায় অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন। আটকদের অপহরণ ও হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
নিহত মুনতাহা কানাইঘাট সদরের বীরদল ভাড়ারিফৌদ গ্রামের শামীম আহমদের মেয়ে।
গ্রেপ্তাররা হলেন – কানাইঘাট থানার বীরদল ভাড়ারিফৌদ গ্রামের মৃত ময়না মিয়া আলিফজান (৫৫) ও তার মেয়ে শামীমা বেগম মার্জিয়া (২৫), একই এলাকায় ইসলাম উদ্দিন (৪০) ও নাজমা বেগম (৩৫)।
কানাইঘাট থানার ওসি আব্দুল আউয়াল বলেন, মামলার তদন্তের স্বার্থে আসামিদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে হত্যাকাণ্ডের পেছনে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) রফিকুল ইসলাম বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা হত্যার কথা স্বীকার করেছে। তাদের মাধ্যমে ঘটনার পুরো প্রক্রিয়া সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা চলছে। আরও কয়েকজনের নাম এসেছে, যাদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে।
গত ৩ নভেম্বর রোববার বাড়ির পাশে খেলতে গিয়ে নিখোঁজ হয় মুনতাহা। এক সপ্তাহ পর রোববার (১০ অক্টোবর) রাত পোহানোর আগেই মিলল ভয়ঙ্কর খবর। মুনতাহাকে হত্যার পর মরদেহ বাড়ির পাশের একটি খালে কাঁদামাটিতে চাপা দিয়ে রাখা হয়েছিল কয়েকদিন।
হত্যাকাণ্ডটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে চাপা দেওয়া অবস্থা থেকে উদ্ধার করেন মর্জিয়ার মা আলিফজান। মুনতাহার মরদেহ কোলে তুলে পুকুরে ফেলার চেষ্টাকালে স্থানীয়রা তাকে হাতেনাতে আটক করে।
এই ঘটনায় অভিযুক্ত মর্জিয়া আক্তার, তার মা আলীফজান ও আলীফজানের মা কুতুবজানকে আটক করা হয়। ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ জনতা মর্জিয়ার বসতঘর গুড়িয়ে দেন। শিশু সন্তানের গলিত নিথর দেহ দেখে বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন মুনতাহার বাবা-মা, স্বজনরা।
হত্যাকাণ্ডে নেপথ্যের কারণ-
স্থানীয়রা জানান, মুনতাহাকে ২৫০ টাকায় প্রাইভেট পড়াতেন মর্জিয়া। তার মা আলিফজান ভিক্ষাবৃত্তি করতেন। ঘরে তার আশি বছরের বেশি বয়সী নানি রয়েছেন। মর্জিয়া চুরির ঘটনায় এবং তার চলাফেরা খারাপ প্রতীয়মান হওয়াতে টিউশনি থেকে তাকে বাদ দেন সেলিম আহমদ। সেই ক্ষোভে প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে ওঠেন মর্জিয়া। সেলিম আহমদের ওপর প্রতিশোধ নিতে গিয়ে শিশু মর্জিয়াকে অপহরণের পর হত্যা করেন।
জনতার হাতে আটকের পর মর্জিয়ার মা আলিফজান বেগম বলেন, ‘অপহরণের পর মর্জিয়াকে আটকাতে চেয়েছিলেন। তখন মেয়ে তাকে বলে টাকা ৫ লাখ পাইমু, আমি আরো দুইটা শিশু আনিয়া দিতাম। অপহরণের রাতে শিশুটিকে জীবিত ঘরে নিয়ে আসে। এরপর আবার তাকে নিয়ে যায়। পরে কী করছে জানি না। এই ঘটনায় যাতে নিজে ফেঁসে যেতে পারেন ভেবে ঘরের পাশের খালে কাদামাটি থেকে শিশুটির মরদেহ কোলে করে নিয়ে পুকুরে ফেলার চেষ্টাকালে তিনি ধরা পড়ে যান।
গত ৩ নভেম্বর সকালে বাড়ির অদূরে একটি মাদ্রাসার জলসা (ওয়াজ মাহফিল) থেকে ছেলে আব্দুর রহিম ও মেয়ে মুনতাহাকে নিয়ে বাড়ি ফেরেন শামীম আহমদ। সেখান থেকে তাদের ফল কিনে দেন। এরপর মুনতাহা শিশুদের সঙ্গে বাড়ির সামনের সড়কে খেলতে যায়। বেলা আড়াইটার দিকে খাবার খেতে মুনতাহার ডাক পড়ে। খুঁজতে গিয়েও শিশুটিকে আর পাওয়া যায়নি। এরপর ওইদিন রাত ১২টায় মুনতাহার বাবা শামীম আহমদ কানাইঘাট থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।