লন্ডনে গোল টেবিল বৈঠক
অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রবাসীদের ছয় দফা দাবি
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ৯:৩৫:৩৪
প্রবাসীদের বিভিন্ন ধরনের অধিকারের কথা মাথায় রেখে আলাদা সংস্কার কমিশন গঠন, প্রবাসীদের মধ্য থেকে অন্তত দুই জন উপদেষ্টা নিয়োগ, বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত প্রবাসীদের মধ্য থেকে দেশের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের জন্য টেলেন্ট হান্টের মতো ছয়টি দাবি জানিয়েছেন লন্ডনপ্রবাসী বাংলাদেশি পেশাজীবীরা। ‘দেড় কোটি প্রবাসী বাংলাদেশি: জাতি গঠনে তারা কীভাবে ভূমিকা পালন করতে পারেন’ শীর্ষক এক সেমিনার থেকে এসব দাবি জানানো হয়।
বুধবার (৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় লন্ডন স্কুল অব কমার্স অ্যান্ড আইটি’র মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এই গোল টেবিল বৈঠকের আয়োজন করেন লন্ডনপ্রবাসী বাংলাদেশি পেশাজীবীরা। বৈঠকে বক্তারা বলেন, বৈষম্য ও ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে প্রবাসীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। বিভিন্ন দেশে প্রবাসীরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে দূতাবাস ও হাইকমিশন ঘেরাও করেছেন, সভা-সমাবেশ করেছেন দিনের পর দিন। মধ্যপ্রাচ্যে বিক্ষোভ করতে গিয়ে অর্ধশত প্রবাসী জেল খেটেছেন। সর্বশেষে প্রবাসীরা ৫ আগস্টের আগে মাসব্যাপী রেমিট্যান্স পাঠানো বন্ধ করে সরকারের টনক নাড়িয়ে দিয়েছিলেন।
সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ ব্যংকের গভর্নর সম্প্রতি জানিয়েছেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রবাসীদের রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ার ফলে বৈদেশিক রিজার্ভে হাত না দিয়েই বৈদেশিক ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা হয়েছে। সুতরাং দেড় কোটির ওপর প্রবাসীকে অবহেলা করার কোনও সুযোগ নেই। তাই দেশ পরিচালনায় উপদেষ্টা পরিষদে অন্তত ১০ শতাংশ প্রবাসী বাংলাদেশি নেওয়া অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সিনেট সদস্য নাসরুল্লাহ খান জুনায়েদের সভাপতিত্বে এবং ব্যারিস্টার নাজির আহমদের সঞ্চালনায় সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক ওলিউল্লাহ নোমান। প্রধান অথিতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. হাসানাত হোসেন, বিশেষ অথিতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক আব্দুল কাদের সালেহ। আলোচনায় অংশ নেন বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার ওমর ফারুক, ব্যারিস্টার ইকবাল হোসেন, ব্যারিস্টার হামিদুল হক আফিন্দী লিটন, সাবেক সেনা কর্মকর্তা আমিন চৌধূরী, ব্যারিস্টার আলিমুল হক লিটন, ব্যারিস্টার এম ফয়ছল, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম এমাদ, ব্যারিস্টার আলী ইমাম, যুবনেতা নাসির উদ্দিন, গবেষক শরীফুল ইসলাম, মানবাধিকার কর্মী তানভীর হাসান, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে বিলেতের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ আহমদ, কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট সাজেদুর রহমান, সমাজকর্মী আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।
বৈঠক যেসব প্রস্তাবনা ও দাবি গৃহীত হয়––
১. প্রবাসীদের ন্যায়সঙ্গত বিভিন্ন দাবি-দাওয়া ও অভিযোগ সরকারের কাছে পাঠালেও যথাযথ বা সন্তোষজনক জবাব পাওয়া যায়নি অতীতে। অথচ প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স হচ্ছে দেশের অর্থনীতির বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের দ্বিতীয় বৃহত্তম খাত। অন্তর্বর্তী সরকার ইতোমধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ১০টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। তাই প্রবাসীদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার, বিভিন্ন দাবি-দাওয়া, সেবার মান ও অভিযোগ–– এসব বিষয়ে সংস্কারের জন্য উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সংস্কার কমিশন গঠনের দাবি জানানো হয়।
২. দেড় কোটির ওপরে প্রবাসী, অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার প্রায় ১০ শতাংশ বাংলাদেশের বাইরে বসবাস করছেন। তাদের মধ্য থেকে অন্তত দুই জন উপদেষ্টা রাখার দাবি তোলা হয়।
৩. বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৬(২)(গ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দ্বৈত নাগরিকরা সংসদ সদস্য হতে পারবেন না। কিন্তু দ্বৈত নাগরিকদের বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, এমনকি প্রধান বিচারপতি হতে কোনও বাধা নেই। ব্রিটেনেও দ্বৈত নাগরিকরা বৃটিশ পার্লামেন্টের মেম্বার হতে পারেন। ব্রিটেনে এমপি হতে বৃটিশ নাগরিক হওয়ারও বাধ্যবাধকতা নেই। কাই জন্মসূত্রে যারা বাংলাদেশি নাগরিক, তাদের দ্বৈত-নাগরিকত্ব থাকলেও সংসদ সদস্য হওয়ার সুযোগ দিতে সংবিধানের সংশ্লিষ্ট বিধান বাতিলের দাবি জানানো হয়।
৪. বিদেশে শত শত দক্ষ প্রফেশনাল আছেন যারা স্ব স্ব ক্ষেত্রে যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখে চলছেন। এই প্রবাসীরা বাংলাদেশ পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। আধুনিক মালয়েশিয়া নির্মাণে দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মুহাম্মদ ব্রিটেনে এসে বৃটিশ- মালয়েশিয়ানদের মধ্যে টেলেন্ট হান্ট করতেন। এমনটি করা জন্য বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাবি জানান প্রবাসীরা।
৫. পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সম্পাদনে আইডি হিসেবে বাংলাদেশি পাসপোর্ট অথবা ব্রিটিশ পাসপোর্ট অথবা এনআইডি কার্ড গ্রহণযোগ্য ঘোষণা করে অতি দ্রুত প্রজ্ঞাপন জারির দাবি জানানো হয়।
৬. ভোটার ও তাদের ভোটে নির্বাচিত এমপিদের সুযোগ-সুবিধায় বিরাট বৈষম্য রয়েছে। যেমন-এমপি হলেই ট্যাক্স ফ্রি গাড়ি, ঢাকায় রাষ্ট্রীয় জমি বরাদ্দসহ নানা উন্নয়ন বরাদ্দ দেওয়া হয় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে। অথচ সংবিধানে বলা আছে আইনের চোখে সবাই সমান। অবিলম্বে এসব বৈষম্যমূলক সুযোগ-সুবিধা ও বরাদ্দ বাতিল করতে হবে।