সিলেট সিটি নির্বাচনে আগ্রহ নেই বামদের, অংশ নেবে না জামায়াত
প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১১:২৪:১৭
সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট ভাগাভাগি হয় নানা সমীকরণে। এর মধ্যে বামদল ও ইসলামী দলগুলোর ভোট মারাত্মক প্রভাব ফেলে ভোটের মাঠে। বিশেষ করে ইসলামী দলগুলোর ভোট যেদিকে যায় তার পাল্লা ভারী হয়। গত কয়েকটি নির্বাচন থেকেই এমনটি হয়ে আসছে।
তবে এবারের সিটি নির্বাচন নিয়ে কোনো আগ্রহ নেই বামদলগুলোর। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিকদেরও নির্বাচন নিয়ে তেমন মাথাব্যথা নেই। ইসলামী দলগুলোর কেউ কেউ প্রার্থী দিলেও গেল নির্বাচনে অংশ নেওয়া জামায়াতে ইসলামী এবার কোনো প্রার্থী দিচ্ছে না। বামদল এবং জামায়াতের নেতারা বলছেন– এই সরকারের অতীতের কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। তাই তারা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছে। অপরদিকে ইসলামী আন্দোলনের নেতারা জানিয়েছেন, তারা নির্বাচনে অংশ নিয়েছে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য।
আগামী ২১ জুন হবে সিলেট সিটি নির্বাচন। এ নির্বাচন নিয়ে সিলেটে এখনও তেমন উত্তাপ তৈরি হয়নি। আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ছাড়া ভোটের মাঠে এখন পর্যন্ত তেমন কেউ নেই। কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী সদস্য ও সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী তাঁর প্রার্থিতার বিষয়টি পরিষ্কার করছেন না। জাতীয় পার্টির তিন মনোনয়নপ্রত্যাশীর মধ্যে নজরুল ইসলাম বাবুল আছেন অনেকটা এগিয়ে। এ অবস্থায় সিটি নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার পরও জমে উঠছে না প্রচার।
অনেকেই বলছেন, মেয়র আরিফুল হক নির্বাচনে প্রার্থী হলে নির্বাচনী উত্তাপ বাড়বে। আর তিনি নির্বাচন না করলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হবেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। এবারের নির্বাচনে অনেকেই মনে করেছিলেন বামদলগুলো থেকে প্রার্থী দেওয়া হবে। কিন্তু নির্বাচনের ৫৮ দিন আগেই তারা সিদ্ধান্ত জানিয়েছে কোনো প্রার্থী দেবে না; এমনকি তারা এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না।
এ ব্যাপারে বাসদ সিলেট নগর শাখার আহ্বায়ক কমিটির সদস্য জুবায়ের আহমদ চৌধুরী সুমন বলেন, তদারকি সরকার ছাড়া এ দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন কোনো ভাবেই সম্ভব নয়। তাই আমরা নির্বাচন থকে সরে দাঁড়িয়েছি।
তবে গত নির্বাচনে বাসদ সিলেট জেলা শাখার আহ্বায়ক আবু জাফর মেয়র পদে প্রার্থী হয়ে মাত্র ৯০০ ভোট পেয়েছিলেন। এদিকে সিটি নির্বাচন নিয়ে কোনো আগ্রহ নেই বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ)।
সিপিবি সিলেটের বিভাগীয় সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট আনোয়ার হোসেন সুমন বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই। এ সরকারের অধীন কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু হয়নি। তাই নির্বাচনে তারা অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
গত নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী প্রার্থী দিলেও এবার সিটি নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে জানিয়েছেন সংগঠনের সিলেট মহানগর শাখার সেক্রেটারি শাহজাহান আলী। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমান সরকারের অধীন কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাই সিটি নির্বাচনে তাঁরা অংশ নেবে না। গত নির্বাচনে সিলেট মহানগর জামায়াতের তৎকালীন আমির অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের স্বতন্ত্র হিসেবে মেয়র পদে নির্বাচন করে ১০ হাজার ৯৫৪ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছিলেন।
এ ছাড়া গত সিসিক নির্বাচনের মতো এবারও সিলেটে প্রচার চালাচ্ছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। কেন্দ্রীয় কমিটির সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুল হাসানকে তাদের দলের প্রার্থী করা হয়েছে। গত নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মোয়াজ্জেম হোসেন হাতপাখা মার্কায় পেয়েছিলেন ২ হাজার ১৯৫ ভোট।
এ বিষয়ে ইসলামী আন্দোলনের সিলেট মহানগর শাখার সহ সভাপতি ডা. রিয়াজ বলেন, এই নির্বাচন আমাদের জন্য এক ধরনের ‘টেস্ট’। এখান থেকেই সিদ্ধান্ত নেব আগামী জাতীয় নির্বাচনে যাব কিনা?
পাশাপাশি গত সিটি নির্বাচনে জাতীয় পার্টি প্রার্থী না দিলেও এবার দলটির তিন নেতা মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন পেতে তৎপর রয়েছেন। তাঁরা হলেন– মহানগর জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম বাবুল, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবুর রহমান চৌধুরী এবং যুক্তরাজ্য জাতীয় পার্টির সহসভাপতি আবদুস সামাদ। তাদের বিলবোর্ড, পোস্টার ও ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে নগরীর বিভিন্ন এলাকা।
জাতীয় পার্টির মনোনয়নপ্রত্যাশী নজরুল ইসলাম বাবুল বলেন, দলের সবুজ সংকেত পেয়েছি। এমনকি জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টি সভা করে আমাকে একক প্রার্থী ঘোষণা করেছে। কেন্দ্রীয় কমিটি তাঁকে মূল্যায়ন করে দলীয় মনোনয়ন দেবে বলে আশাবাদী এই নেতা।