সংঘাতের স্মৃতি ভুলে গাঁটছড়া
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ৮:৫৬:৩৮
হবিগঞ্জ প্রতিনিধি : গ্রামীণ সংঘাতে অল্প বয়সেই বাবাকে হারান শামীম মিয়া। ২০০৬ সালে হবিগঞ্জ সরকারি শিশু পরিবারে (বালক) আশ্রয় নেন লাখাই উপজেলার মকসুদপুর গ্রামের শামীম। কম্পিউটার সায়েন্সে ২০১৮ সালে ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেন তিনি। অবশেষে একাকী জীবনের সমাপ্তি হয়েছে তাঁর। গতকাল সোমবার জীবনের গাঁটছড়া বেঁধেছেন মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল সরকারি শিশু পরিবারে (বালিকা) আশ্রিত রুহেনা বেগমের সঙ্গে। তাঁর জীবনের গল্পও একই রকম। ২০২১ সালে এসএসসি পাস করেন তিনি।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের বার্ষিক খেলাধুলায় অংশ নেওয়ার সময় এ দু’জনের পরিচয় হয়। পরে রুহেনাকে ভালো লাগার বিষয়টি নিজ প্রতিষ্ঠানের সাবেক প্রধান সাইফুল ইসলামকে জানান শামীম। শিশু পরিবার ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য শাহ ফখরুজ্জামান ও হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহানের সঙ্গে আলোচনা করে বিয়ের বিষয়টি পাকাপাকি করেন তিনি।
বাবাহারা দু’জনের জীবনের নতুন অধ্যায় রচনায় এগিয়ে আসেন সমাজের বিত্তবান ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা। শামীম ও রুহেনার বিয়েকে কেন্দ্র করে সোমবার শিশু পরিবারে ছিল সাজসাজ রব। গেট আর সাজসজ্জার কমতি ছিল না। নানা উপহার নিয়ে আসেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। নিবাসীদের মাঝেও ছিল উৎসাহ-উদ্দীপনা।
খাওয়া-দাওয়া শেষে জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান, পুলিশ সুপার এস এম মুরাদ আলী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) রফিকুল আলমের উপস্থিতিতে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। এ সময় শামীমের মা জাকিয়া খাতুন ও রুহেনার মা সেলিনা বেগমও উপস্থিত ছিলেন।
বিয়ের অনুষ্ঠানে উপহার নিয়ে আসেন হবিগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের প্রেসিডেন্ট মিজানুর রহমান শামীম। তিনি বলেন, ‘এই আয়োজন ব্যতিক্রম। আমরা সব সময় ভালো কাজের সঙ্গে আছি।’
এ বিয়েতে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন লন্ডন প্রবাসী অধ্যাপক আব্দুল হান্নান। তিনিও সপরিবারে আসেন। জীবনে অনেক বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশ নিলেও এমন আয়োজনে অংশ হতে পেরে নিজের ভালো লাগার কথা জানান।
হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান বলেন, ‘সবাই মিলে এ ধরনের কাজ করতে পারলে আমরা সুন্দর সমাজ গড়ে তুলতে পারব।’
পুলিশ সুপার এস এম মুরাদ আলী আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান। যাঁরা এ বিয়ের আয়োজনে সহায়তা করেছেন, তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক রাশেদুজ্জামান চৌধুরী। পরে উপস্থিত অতিথিরা নবদম্পতিকে শুভেচ্ছা জানান। এতে আপ্লুত হয়ে পড়েন শামীম ও রুহেনা। তাঁরা বলেন, এমন সুন্দর আয়োজনে বাবা হারানোর ব্যথা অনেকটাই ভুলে গেছেন। জীবনে প্রতিষ্ঠিত হলে সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য তারা কাজ করবেন।