সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মুহিতকে শেষ শ্রদ্ধা
প্রকাশিত হয়েছে : ০১ মে ২০২২, ৩:৪৬:১২
স্টাফ রিপোর্টার : ২০১৪ সালের ১০ ডিসেম্বর পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে পুনরায় নির্মিত সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ২০১৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠি পুরাতন শহীদ মিনার ভেঙে ফেলার পর নতুন মিনারের নকশা বাছাই থেকে শুরু করে সবকিছু তদারকি করেছিলেন তিনি। এই শহীদ মিনার প্রাঙ্গণেই বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ মুহিতকে শেষবিদায় জানালেন প্রিয় সিলেটবাসী। রোববার দুপুর ১২টার দিকে প্রয়াত মুহিতের মরদেহ বিশেষ অ্যাম্বুলেন্সে করে শহীদ মিনারে আনার পর সর্বস্তরের মানুষ ফুলেল শ্রদ্ধার মাধ্যমে তাকে বিদায় জানান।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মুহিতকে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের জন্য সকাল থেকে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ আসতে শুরু করেন। শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে কালো কাপড় দিয়ে বিশেষ মঞ্চ প্রস্তুত করা হয়। দুপুর ১২টার দিকে কফিনবাহী অ্যাম্বুলেন্স আসার পর বিভিন্ন স্তরের মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
প্রথমেই সিলেট মহানগর পুলিশের একটি চৌকস দল ভাষাসৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আবুল মাল আবদুল মুহিতের প্রতি রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদর্শন করা হয়। এরপর প্রয়াতের প্রতি সম্মান দেখিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
এরপর সাবেক অর্থমন্ত্রী মুহিতের মরদেশে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান, মুহিবুর রহমান মানিক এমপি, উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ এমপি, হাবিবুর রহমান হাবিব এমপি, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
শ্রদ্ধা নিবেদন করেন শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যও। এছাড়া সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার, ডিআইজি, পুলিশ কমিশনার, জেলা প্রশাসক, জেলা পরিষদ, পুলিশ সুপারসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
রোববার দুপুর ২টায় নগরীর ঐতিহাসিক আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে জানাযা শেষে তাকে দাফন করা হবে। নগরীর রায়নগরে স্থানীয়ভাবে ডেপুটি বাড়ি বা সাহেববাড়ি হিসেবে পরিচিত পৈত্রিক বাড়ি সংলগ্ন পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে। মা সৈয়দা শাহার বানু চৌধুরী ও বাবা আবু আহমদ আব্দুল হাফিজের কবরের পাশেই তাকে দাফন করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ জানাযায় অংশ নেওয়ার জন্য ইতোমধ্যে বিভিন্ন জায়গা থেকে হাজারও মানুষ আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে সমবেত হয়েছেন।
শনিবার রাতে ঢাকা থেকে সড়কপথে প্রয়াত মুহিতের মরদেহ সিলেটে আনা হয়। সেখানে আত্মীয়-স্বজন ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা তাকে শেষবারের মতো দেখেন। দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মুহিতের মৃত্যুতে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ দুইদিনের শোক পালন করছে। এজন্য দলীয় কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন ও নেতাকর্মীরা কালোব্যাজ ধারণ করছেন। ঈদুল ফিতরের পরের দিন হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজার মসজিদে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল করবে সিলেট আওয়ামী লীগ।
গত শুক্রবার রাত ১২টা ৫৬ মিনিটে রাজধানীর একটি হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন মুহিত। তিনি ক্যান্সারসহ বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি মর্যাদাপূর্ণ সিলেট-১ (সদর-নগর) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালের নির্বাচনেও তিনি বিজয়ী হন। এই সময়ে তিনি অর্থমন্ত্রী হিসেবে দেশের সবচেয়ে বেশিবার বাজেট প্রণয়নের রেকর্ড গড়েন। ‘আলোকিত সিলেট’ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে তিনি ২০০১ সালের নির্বাচনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তিনি স্বেচ্ছায় রাজনীতি থেকে অবসর নেন।