নাচে-গানে ঋতুরাজকে বরণ
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ৩:৪৪:০৪
পাতাঝরা শীতের মৌনতা ভেঙে বাংলার প্রকৃতিতে নতুন রূপ নিয়ে এসেছে বসন্ত। পাখির কলতানে মুখর চারপাশ, গাছে গাছে এসেছে নতুন কুঁড়ি, আর তাতে আভা দিয়েছে রক্তিম পলাশ, অশোক, শিমুল, কৃষ্ণচূড়া, কাঞ্চন পারিজাত, মাধবী আর গাঁদাসহ হরেক রকম বর্ণিল ফুল; সবমিলিয়ে প্রকৃতিতে উৎসবের আমেজ। বাংলার ঋতুরাজ বসন্তের এই রূপে বিমোহিত উৎসবপ্রিয় এই জাতিও চুপ নেই।
আজ সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বসন্তকে বরণ করে নিতে চলছে নানা আয়োজন। রাজধানীতে বসন্ত বরণের মূল আকর্ষণ ‘জাতীয় বসন্ত উদযাপন পরিষৎ’-এর আয়োজনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্ত মঞ্চে ‘এসো মিলি প্রাণেরই উৎসবে’ শ্লোগানকে ধারণ করে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে চলছে বসন্তবরণ অনুষ্ঠান। ‘বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়’-এর রাগ বসন্তের মাধ্যমে শুরু অনুষ্ঠানটি।
প্রতিবছর জাতীয় বসন্ত উদযাপন পরিষৎ-এর আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার বকুল তলা, রবীন্দ্র সরোবর, রমনাসহ বিভিন্ন জায়গায় বসন্তবরণ অনুষ্ঠান করা হলেও মহামারির কারণে এবার শুধু সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চেই কেন্দ্রীয়ভাবে উদযাপন হচ্ছে দিবসটি।
অন্যান্য বছরে শুষ্ক-রুক্ষ এই সময়টা এবছর এখনও শীতের আমেজ বিদ্যমান। এরই মাঝে বসন্ত জাগ্রত দ্বারে। জনজীবনে বসন্ত বরণের ছোঁয়া আর ভালোবাসার রঙ এবার একাকার। প্রতিবছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলাসহ বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন সংগঠন বিভিন্ন আয়োজনের মাধ্যমে দিবসটি উদযাপন করলেও মহামারীর বিধিনিষেধ এবার সেটিও হচ্ছে না। তবে একবছর পর সশরীরে উৎসবে ফিরতে পেরে খুশি দর্শনার্থী ও শিক্ষার্থীরা।
ঘুরতে আসা এক শিক্ষার্থী ইসমত জাহান ইরা বলেন, ‘প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার বকুল তলায়, বটতলাসহ বিভিন্ন জায়গা নানাবিধ অনুষ্ঠান হতো। মহামারিতে এবার কিছু সংক্ষিপ্ত পরিসরে বসন্ত বরণ চলছে। তবুও আমরা খুশি সশরীরে উৎসবে ফিরতে পেরে। আশা করছি আগামী বছর সম্পূর্ণ সুস্থ পরিবেশে দিবসটি উদযাপন করতে পারবো।’
দিনটিকে ঘিরে বসন্তের সাজে সেজেছে সবাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির চত্বরে, টিএসসি সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশপথে বসেছে অস্থায়ী ফুলের দোকান।
প্রসঙ্গত, ১৫৮৫ সালে সম্রাট আকবর বাংলা বর্ষপঞ্জি হিসেবে আকবরি সন বা ফসলি সনের প্রবর্তন করেন। তিনি প্রতি বছর ১৪টি উৎসব পালনের রীতিও প্রবর্তন করেন। এর মধ্যে অন্যতম বসন্ত উৎসব। ১৯০৭ সালে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোট ছেলে শমীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাত ধরে শান্তিনিকেতনে যাত্রা শুরু করে বসন্ত উৎসব, যা ‘ঋতুরঙ্গ উৎসব’ নামেই পরিচিত।
স্বাধীন বাংলাদেশে এর গোড়াপত্তন গত শতকের নব্বইয়ের দশকে। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের উত্তাল সময়ে সাংস্কৃতিক আন্দোলনের হাত ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় ছোট্ট পরিসরে শুরু হয় বসন্ত উৎসব। কোনোরকম পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়াই ১৯৯১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ৮৯ ব্যাচের একদল শিক্ষার্থীর উদযাপন করা বসন্তের প্রথম দিন, পহেলা ফাল্গুন আজ দেশের অন্যতম একটি বৃহৎ সর্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে।
পরে বঙ্গাব্দ ১৪০১ সালে জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষৎ- এর আয়োজনে আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকায় শুরু হয় বসন্ত উৎসব।