সাগর-রুনি হত্যা মামলা: এখনও তথ্য ‘চুলচেরা বিশ্লেষণ’ করছে র্যাব
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ৩:১৯:১৭
সাংবাদিক সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার নানা তথ্য এখনও ‘চুলচেরা বিশ্লেষণ’ চলছে বলে জানিয়েছেন র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন কথা জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
দীর্ঘ এক দশকেও শেষ হয়নি সাংবাদিক সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্ত। এতে হতাশ হয়ে পড়েছেন তাদের স্বজন-সহকর্মীরা। তদন্তের দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় এ পর্যন্ত ৮৫ বার পিছিয়েছে প্রতিবেদন জমার তারিখ। আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমার নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু তদন্তে কেন দীর্ঘসূত্রতা- সে প্রশ্নের উত্তর মেলেনি।
শুক্রবার র্যাবের সংবাদ সম্মেলনের শেষে সাংবাদিকরা এই নিয়ে প্রশ্ন তুললে র্যাব কর্মকর্তা মঈন নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন।
খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘ সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের ২ মাস পর র্যাব এই হত্যা মামলার তদন্তের দায়িত্ব পায়। সেই থেকে সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে, পেশাদারিত্বের সঙ্গে র্যাব এই মামলার তদন্ত করছে। আমরা সিআইডি, ডিবি থেকে নানা তথ্য নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছি। ডিএনএসহ নানা নমুনা আমরা যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়েছি। সেখান থেকে রিপোর্ট আসতেও সময় লেগেছে। সবগুলো নিয়ে আমাদের তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে বিজ্ঞ আদালতকে জানাচ্ছেন। আদালতের মাধ্যমেই কিন্তু সময় বাড়ানো হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এখনও তদন্ত চলমান রয়েছে। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা সেই প্রতিবেদন জমা দেব।’
খন্দকার আল মঈন বলেন, সাগর-রুনি হত্যা মামলায় এ পর্যন্ত ১৬০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেছে র্যাব। সন্দেহভাজনদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করেছে র্যাব।
তিনিব বলেন, ‘এই মামলাটি সরকার, র্যাব অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। তবে আমাদের উদ্দেশ্য একটাই, আমাদের তদন্তের মাধ্যমে নিরপরাধ কোনো ব্যক্তি যেন সাজা না পান।’
সাগর-রুনির পরিবার র্যাবের তদন্তে আস্থা হারাচ্ছেন বলে গণমাধ্যমে যে প্রতিবেদন এসেছে তা নিয়ে খন্দকার মঈন বলেন, ‘চাঞ্চল্যকর বিভিন্ন তদন্তের ভার র্যাবকে দেয় আদালত অথবা সরকার। অনেক সময় বাদীপক্ষই আদালতে গিয়ে আবেদন জানান, তদন্তভার র্যাবকে দেওয়া হোক। সেটা র্যাবের প্রতি মানুষের আস্থা আছে বলেই তারা চান। আমরা সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের সঙ্গে সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করছি।’
সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের এক দশকে তিন দিনব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)। নিষ্ঠুর এই হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টায় ডিআরইউ চত্বরে মোমবাতি প্রজ্বালন করা হয়। শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় ডিআরইউ চত্বরে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। রোববার সকালে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি পেশ করা হবে।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ভোরে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ফ্ল্যাট থেকে সাগর-রুনির ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সাগর ছিলেন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক। আর রুনি এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক। নৃশংস ওই হত্যাকাে র সময় বাসায় ছিল সাংবাদিক দম্পতির একমাত্র সন্তান মিহির সরওয়ার মেঘ। তখন তার বয়স ছিল সাড়ে চার বছর। এখন সে রাজধানীর একটি স্কুলে স্ট্যান্ডার্ড ৯-এ পড়ছে।
মা-বাবাকে হারানো মেঘ তার নানি নুরুণ নাহার মির্জাকেই ‘মা’ বলে ডাকত। নুরুণ নাহারও সন্তান হারিয়ে নাতিকে অবলম্বন করেই নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখেছিলেন। তবে সম্প্রতি সেই মাকেও হারিয়েছে মেঘ। সাগর-রুনির খুনি কারা তা না দেখেই গত ৫ জানুয়ারি পৃথিবী ছেড়ে চলে যান নুরুন নাহার। আর গত বছরের জুনে শিশুটি হারিয়েছে তার আরেক প্রিয় মানুষ খালা নাবিলা ইফাত ধ্রুবকে।
রুনির ভাই ও মামলার বাদী নওশের আলম সমকালকে বলেন, ‘মা ভেতরে ভেতরে দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত তিনি খুনিদের চেহারা দেখে যেতে পারলেন না। এত দিনেও তদন্তের কোনো অগ্রগতির খবর পেলাম না।’