স্কুলের টয়লেটে ১১ ঘণ্টা আটকে থাকার পর বাকপ্রতিবন্ধী ছাত্রী উদ্ধার
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১১:০৭:০১
চাঁদপুর প্রতিনিধি : চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলায় স্কুল ছুটির পর টয়লেটে আটকা পড়ে প্রা ১১ ঘণ্টা দুর্বিষহ সময় কাটিয়েছে দশম শ্রেণির বাকপ্রতিবন্ধী এক ছাত্রী।
উপজেলার টামটা উত্তর ইউনিয়নের হোসেনপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের টয়লেটে বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আটকা পড়ে ওই ছাত্রী। এদিন রাত ১০টার দিকে টয়লেটের ভেন্টিলেটর দিয়ে হাত দেখতে পেয়ে দরজা ভেঙে তাকে উদ্ধার করা হয়।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বাক্প্রতিবন্ধী ওই ছাত্রী এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবে। বৃহস্পতিবার স্কুল ছুটির কিছুক্ষণ আগে সে টয়লেটে যায়। এর মধ্যে ছুটির ঘণ্টা বেজে উঠলে সব শিক্ষার্থী বাড়িতে চলে যায়। এরপর স্কুলের আয়া টয়লেটে তালা লাগিয়ে দেন। এতে সে টয়লেটে আটকে যায়। পরে শিক্ষার্থী বাড়িতে না আসায় তার বাবা বিভিন্ন জায়গায় খোঁজখবর নিতে শুরু করেন। এমনকি সহপাঠীদের বাড়িতে গিয়ে তার মেয়ের কোনো সন্ধান না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েন। এর মধ্যে তার মা–ও মেয়ের নিখোঁজের খবর পেয়ে কুমিল্লা থেকে চাঁদপুরে বাড়িতে চলে আসেন। এদিকে রাত ১০টায় আল আমিন নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি স্কুলের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় টয়লেটের ভেন্টিলেটরে কারও হাত দেখতে পান। তিনি বিষয়টি সবাইকে অবহিত করেন। পরে স্থানীয় এলাকাবাসী স্কুলে প্রবেশ করে টয়লেটের তালা ভেঙে মেয়েটিকে উদ্ধার করেন। এই ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত করে দায়ীদের বিচার দাবি করেছেন শিক্ষার্থীর পরিবারের সদস্যরা।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা গিয়াস উদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, ‘আমি ঘটনা সম্পর্কে অবহিত নই। তবে এমন কিছু হয়ে থাকলে দায়ী ব্যক্তিরা কোনো ছাড় পাবে না। শনিবার আমি নিজে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করব।’
প্রত্যক্ষদর্শী যুবক আল আমিন বলেন, ‘রাত ১০টার দিকে বিদ্যালয়ের পাশের রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম। এ সময় বিদ্যালয়ের টয়লেট থেকে গোঙানির শব্দ শুনতে পাই। পরে টয়লেটের ভেন্টিলেটর দিয়ে মোবাইলের আলোতে মানুষ দেখতে পেয়ে চিৎকার দেই। আশপাশের লোকজন এসে তালা ভেঙে মেয়েটিকে উদ্ধার করেন। এ সময় তার চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ দেখতে পাই। তখন তাকে উদ্ধার করতে না পারলে বড় কোনো ক্ষতি হতে পারত।’
ছাত্রীটির বাবা বলেন, ‘স্কুল ছুটি হলেও মেয়ে বাড়ি ফিরছে না দেখে আমরা বিভিন্ন স্থানে খুঁজতে থাকি। তার সহপাঠী ও স্বজনদের বাড়িতে হন্যে হয়ে খোঁজ নিয়েছি। কোথাও খুঁজে পাচ্ছিলাম না। রাত সাড়ে ১০টার দিকে স্থানীয় লোকজন মেয়েকে টয়লেটের তালা ভেঙে ভেতর থেকে উদ্ধার করেন।’
তিনি ক্ষোভ নিয়ে বলেন, ‘আমার মেয়ে ক্লাসরুমে বই, খাতা, স্কুলব্যাগ রেখে টয়লেটে গিয়েছিল। শিক্ষকরা বই, খাতা দেখেও কি বুঝতে পারেননি এক ছাত্রী নেই। এমনকি যখন টয়লেট বন্ধ করতে গেছে, তখনও কি তারা দেখেননি যে দরজা ভেতর থেকে বন্ধ। এই ঘটনার পর থেকে ভয়ে, আতঙ্কে আমার মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আমি দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির দাবি জানাই।’
এ ঘটনায় কারও দায়িত্বে অবহেলা রয়েছে কি না, তা তদন্ত করতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিরীন আক্তার।