মেডিকেল কলেজেও প্রাণ ফিরল
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১০:২৮:১৩
স্কুল-কলেজের পর মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরাও সশরীরে ক্লাসে ফিরলেন। প্রায় দেড় বছর বন্ধ থাকার পর সোমবার একযোগে সারাদেশের সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজগুলোতে ক্লাস শুরু হয়েছে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রথম, দ্বিতীয় ও পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থীরা ক্লাসে উপস্থিত ছিলেন। দীর্ঘ ছুটির পর ক্লাস শুরুর প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মেডিকেল কলেজগুলো ছিল উৎসবমুখর।
ক্লাস শুরু উপলক্ষে প্রতিটি মেডিকেল কলেজ পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের বরণ করে নিতে মেডিকেল কলেজের ফটক ও শ্রেণিকক্ষ সাজানো হয় বেলুন ও ফেস্টুন দিয়ে। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা পরিচিতি ক্লাস ও ক্যাম্পাস চত্বরে ঘোরাঘুরি করে দিন পার করলেও দ্বিতীয় ও পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষেই কাটাতে হয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী তৌহিদুল আবেদীন তানভীর জানান, প্রথম বর্ষে ভর্তির পর এতদিন অনলাইনে ক্লাস করতে হয়েছে। এ কারণে কিছুটা বিরক্তি কাজ করছিল। প্রথমবারের মতো সশরীরে ক্লাসে উপস্থিত হয়ে সেটি কেটে গেছে। মেডিকেলে পড়া একটি লং জার্নি। প্রথম দিন সহপাঠী ও শিক্ষকরা একে অন্যের সঙ্গে পরিচিত হয়েছি। এখন থেকে নিয়মিত কলেজে উপস্থিত হয়ে ক্লাস করতে পারব, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, পড়াশোনা সবকিছু ভাগাভাগি হবে- এটি আনন্দের। সব মিলিয়ে প্রথম দিন সবার ভালো কেটেছে।
দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মোস্তফা আনিফ বলেন, গত বছর মার্চ মাসে মেডিকেল কলেজ বন্ধ হওয়ার আগে মাত্র দুই মাস ক্লাস করতে পেরেছিলেন। এরপর প্রথম বর্ষের বাকিটা অনলাইনে সম্পন্ন হয়েছে। দ্বিতীয় বর্ষের ক্লাসও অনলাইনে শুরু করেছিলেন। সশরীরে ক্লাসে উপস্থিত হওয়ার মধ্য দিয়ে সেটির অবসান ঘটল। পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান জানান, পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ওয়ার্ডে রোগীর সঙ্গে কাজ করতে হয়। কিন্তু কলেজ বন্ধ থাকায় এতদিন সেটি সম্ভব হচ্ছিল না। সশরীরে ক্লাস শুরু হওয়ায় হাতে-কলমে শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ পাওয়ায় তারা আনন্দিত।
ঢামেকের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. টিটো মিঞা বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস শুরু হয়েছে। তার মেডিকেলে একেকটি শিক্ষাবর্ষে আড়াইশ থেকে তিনশর মতো শিক্ষার্থী রয়েছে। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে তাত্ত্বিক ক্লাসগুলো অনলাইনে গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে প্রায়োগিক ক্লাসগুলো শিফট করে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। সুতরাং স্বাস্থ্যবিধি মেনেই পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, সশরীরে পাঠদান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। তাদের সেই ক্ষতি পুষিয়ে দিতে প্রাকটিক্যাল ক্লাসগুলো ডাবল করে গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। শিক্ষকরাও এ বিষয়ে প্রস্তুত।
হলে শিক্ষার্থীদের অবস্থানের বিষয়ে অধ্যক্ষ বলেন, অনেক সময় হলের বড় কক্ষে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের উঠতে হয়। আপাতত ওই কক্ষগুলোতে ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী অবস্থান করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তাদের হলের বাইরে না যাওয়া ও বাইরের খাবার গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এএইচএম এনায়েত হোসেন বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ জন্য প্রতিটি মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ ক্লাস পরিচালনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। অর্থাৎ কী প্রক্রিয়ায় কোন ক্লাস নেওয়া হবে, সেটি তারা নির্ধারণ করবে। কোনো কোনো মেডিকেল কলেজের একটি শিক্ষাবর্ষে দুইশ থেকে তিনশ শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের ক্ষেত্রে থিওরিটিক্যাল ক্লাস অনলাইনে এবং প্রাকটিক্যাল ক্লাসগুলো কয়েকটি শিফটে ভাগ করে সশরীরে হবে।
তিনি জানান, যেসব মেডিকেল কলেজে একটি শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৫০ থেকে ১০০ জনের মতো সেগুলোয় শিফট ভাগ করে দুই ধরনের ক্লাসই সশরীরে হবে। আবার অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থী থাকা কোনো মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ চাইলে শিফটে ভাগ করেও দুই ধরনের পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে। সুতরাং এটি স্থানীয় কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করবে। করোনাভাইরাস পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হবে। তখন সব ধরনের পাঠদান প্রক্রিয়া সশরীরে হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
গত বুধবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে মেডিকেল কলেজের জন্য একটি নির্দেশনা জারি করা হয়। এতে বলা হয়, স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে চিকিৎসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থী হোস্টেল (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) ক্লাস শুরুর তিন দিন আগে খুলে দিতে হবে। সশরীরে ক্লাস পরিচালনার ক্ষেত্রে যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে হবে। শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে প্রশিক্ষণ প্রদান ও স্বাস্থ্যবিধির উপকরণগুলো সহজলভ্যের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। শুরুতে ক্লাসের সংখ্যা ও সময় কম রাখা যেতে পারে। সশরীরে উপস্থিতির পাশাপাশি অনলাইনে ক্লাস চলমান থাকবে। মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষরা সশরীরে ক্লাস পরিচালনা কার্যক্রম নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের রিপোর্ট প্রেরণ করবেন। এক মাস পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে অন্যান্য সেশনের ক্লাস শুরুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
গত ২ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে মেডিকেল কলেজ খুলে দেওয়ার ঘোষণা দেন। পরদিন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিও ১২ সেপ্টেম্বর থেকে স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়ার ঘোষণা দেন। দুটি ঘোষণাই কার্যকর হলো।