সিলেটে মেয়রের বক্তব্যে ক্ষুদ্ধ আ.লীগ, চলছে পালটাপালটি বাহাস
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১১:১৭:৫৩
প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের গুণকীর্তণ করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের তীব্র সমালোচনা করেন সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শাসক দলের নেতারা। এ নিয়ে শুরু হওয়া বাহাস এখন ফেসবুকে ভাইরাল।
সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ শনিবার বিবৃতি দিয়ে মেয়রের বক্তব্যের নিন্দা জানিয়েছে। বলেছে, নগর পরিচালনার ক্ষেত্রে সিটি মেয়রের একক কর্তৃত্বপরায়নতা, স্বজনপোশন-আত্মীয়করণ, লাঠিয়াল ‘হেলমেট বাহিনী’ লালনসহ নানাবিধ কর্মকাণ্ড জনমনে ক্ষোভের সঞ্চার করেছে।
গত ৫ সেপ্টেম্বর এম সাইফুর রহমানের ১২তম মৃত্যুবার্ষিকী অনুষ্ঠানে সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর দেওয়া বক্তব্যের ভিডিও ‘সত্য বয়ান’ হিসেবে প্রচার করা হয় ফেসবুকে।
মৌলভীবাজারের ওই স্মরণসভায় মেয়র বলেন, সিলেট অঞ্চলে সাইফুর রহমান, খালেদা জিয়া, জিয়াউর রহমানের নাম মুছে ফেলা হচ্ছে তাদের করে যাওয়া উন্নয়ন কাজ থেকে। কিন্তু মানুষের মুখে নতুন নাম উচ্চারণ করাতে পারছে না। মানুষ এখনো জানে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সেই ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, আজকে যেটা গর্ব করে বলেন বিভাগীয় স্টেডিয়াম এসব কার অবদান? যারা এসব মুছে দিচ্ছে এদের সম্পর্কে কিছু বলে লাভ নেই। এদেরকে ধিক্কার দেওয়া ছাড়া কোনো বক্তব্য আমার মুখে নেই। এদের চামড়া এত শক্ত হয়েছে যে, গন্ডারের চামড়া থেকে আরও বেশি। এদের গায়েও কিছু লাগে না।
কারও নাম উল্লেখ না করে আরিফুল হক আরও বলেন, ঘুম থেকে উঠেই তারা বিএনপি পরিবারের ওপর, শহিদ জিয়া থেকে শুরু করে খালেদা জিয়া, তারেক রহমান পর্যন্ত তসবির মতো জপতে থাকে। তাদের আর কোনো কাজ নেই। তারা সরকারে বসে ঘুমিয়ে আছে। কী বলব, ভাষায় বলার মতো নেই। তারা শেষ পর্যন্ত সব ধ্বংস করে দিয়ে এখন লাগছে পদকটা (জিয়াউর রহমানের বীরউত্তম পদক) নিয়ে টানাটানি। এদের যে কী দশা হবে, আল্লাহ জানে। আসলে তারা ভীত।
বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আরিফুল হকের এমন বক্তব্য ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যেও প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদ তার ফেসবুকে মেয়রের বক্তব্য প্রত্যাহার করার আহ্বান জানান। আসাদ উদ্দিন আহমদ সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। ২০১৮ সালে সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন।
আসাদ উদ্দিন আহমদ লিখেছেন, মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর বক্তব্য ‘উসকানিমূলক’ ও ‘কটূক্তিমূলক’। মেয়র সাহেব, আপনি ভুলে যাবেন না, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে মেয়রের চেয়ারে বসে আছেন এবং ইচ্ছামতো সরকারের টাকার অপচয় করছেন।’
সিলেট নগরীর উন্নয়নে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতায় সিটি করপোরেশনে শত শত কোটি টাকা বরাদ্দ এসেছে উল্লেখ করে আসাদ লিখেছেন, ‘আপনি (মেয়র) সেই টাকায় পছন্দের ঠিকাদারকে দিয়ে অপরিকল্পিতভাবে যা ইচ্ছা তা করে যাচ্ছেন। এত গাফিলতি এবং অনিয়মের পরেও সরকার উন্নয়নের স্বার্থে দেশের একসময়ের শীর্ষ তালিকাভুক্ত দুর্নীতিবাজ হওয়া সত্ত্বেও আপনার বরাদ্দ বন্ধ করেনি, কিংবা সিলেটের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরাও কোনো প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেনি। কারণ আওয়ামী লীগ প্রতিহিংসার রাজনীতি করে না, বরং সম্প্রীতির রাজনীতিতে বিশ্বাসী। দুঃখ হয়, এত সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার পরও আপনি আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের গন্ডারের চামড়ার সঙ্গে তুলনা করলেন। আর কী পেলে আপনার মধ্যে সামান্যতম কৃতজ্ঞতাবোধ জন্ম নেবে?’
এর জবাবে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, আমি আমার বক্তব্যে কারও নামও উল্লেখ করিনি। আমাদের কথা বলার স্বাধীনতাও কি নাই?
এদিকে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. জাকির হোসেন এক বিবৃতিতে সিটি মেয়রের কটূভাষ্য ও শালিনতা বর্জিত দাবি করে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। বিবৃতিতে তারা বলেছেন, সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেনের তৎপরতায় সিলেটের সার্বিক উন্নয়নে বরাদ্দ হয়েছে। সিটি মেয়র সরকার ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কৃতিত্ব আড়াল করে নিজেকে জাহির করতে উঠেপড়ে লেগেছেন। মেয়রের এমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও উসকানিমূলক বক্তব্যে সচেতন মহল সন্দিহান। তারা মেয়রের বক্তব্য প্রত্যাহার করার আহ্বান জানান। অন্যথায় উদ্ভূত পরিস্থিতির দায়ভার মেয়রকেই বহন করতে হবে।