‘মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে আমাদের ধর্ষণ করতো বাবা’
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ আগস্ট ২০২১, ৩:৪২:৫৬
তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) সংবাদদাতা : তখন সে ১০-১২ বছরের শিশু। তার বাবা দোবির উদ্দিন (৪২) তাকে ধর্ষণ করতে থাকেন। এভাবে কেটে যায় দীর্ঘ সাড়ে চার বছর। মেয়েটির বিয়ের পর তার বাবার বিকৃত যৌন লালসা থেকে রক্ষা পায়। তারা দুই বোন। এখন তার যে বোনটি বাড়িতে আছে, সে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। তার বয়সও ১০-১২ বছর হবে। সেই মেয়েটিকেও নির্মম যৌন নির্যাতন করা ও ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে তার বাবা দোবির উদ্দিনের বিরুদ্ধে।
জানা গেছে, গত কোরবানির ঈদের ৪-৫ দিন আগে দোবির উদ্দিন দিনের বেলায় তার ছোট মেয়েকে ধর্ষণ করার জন্য নির্যাতন করতে থাকেন। মেয়েটি ভয়ে ও আতংকে কাঁদতে শুরু করে। তখন তার বাবা তার বড় বোনের স্বামীর মোবাইলে ফোন দেয়। তার যে মেয়েকে সে টানা সাড়ে চার বছর ধর্ষণ করে অন্য ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিয়েছেন।
শেষ পর্যন্ত কল রেকর্ড ধরেই প্রকাশ পায় নিজ বাবা কর্তৃক দুই শিশু কন্যাকে পৈশাচিক যৌন নির্যাতনের লোম হর্ষক তথ্য।
সেই কল রেকর্ড হুবহু তুলে ধরা হলো- “ হ্যালো ? হ্যালো। এ বিটি ? আঁহ। কোথায় আচাও ? এযে এটি। একটু বাইরে যাওতো, তোমার ছোট বোনের সাথে কথা কও। কার সাথে ? তোমার ছোট বোনের সাথে। ছোট বোনের সাথে ? হ। হ্যালো ? দেন। আচ্ছা, এ বিটি ? আঁহ। তোক আমি শিকাইনি ? আহ ? তোমাক আমি শিকাইনি কাম কাইজ ? হ। লেওয়া দেওয়া ? হ। ক্যা ? না এ যে বাচ্চা লেওয়া পন্ত শিকাইনি তোক আমি ? তাইলে এযে তোর ছোট বোনেক ধিরে ধিরে শিখান লাগবিলা ? উঁ হু.. বোঝনা , এ তুই কয়াদে যে শিকপি, ক ? এ আপু ? কোনে ? এ আপু ? আঁহ। তুই কো ? মা কোনে ? মা নামাজ পড়তে গেচ। কোনটি ? শায়লা গা বাড়ি। হ্যালো ? অঁাঁহ, কি, কলুলা ? হ। তোর মায়ের কাছ য্যাবার চ্যাচ্ছে আর কোচ্ছে যে কয়া দেবো, এইডা কি কওয়ার মতো কতা ? মান সন্মান খাবিলা ? কয়া দে একটু যাল্লা তুই, এই লে কয়া দে। আঁহ ? শিকপি না কি, কি করবি তুই কয়া দে। আমি কি কবো ?। তুই শিকিসনাই ? আঁহ ? তুই শিকিসনি ? কয়া দে। মার কাছ যাবো।”
এদিকে এ ঘটনার জের ধরে দোবির উদ্দিনের পরিবারকে সমাজচ্যুত করে রাখা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন মাগুড়াবিনোদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রভাষক আতিকুল ইসলাম বুলবুল।
তিনি বলেন, লোক মুখে এসব কথা শুনেছেন। কিন্তু ব্যস্ততার কারণে ভুক্তভোগীদের খোঁজ খবর ও তাদের সঙ্গে কথা বলা হয়ে ওঠেনি।স্থানীয়রা তাদের সমাজচ্যুত করে রেখেছেন।
রবিবার বিকেলে (১৫ আগস্ট) সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার মাগুড়াবিনোদ ইউনিয়নের চর হামকুড়িয়া গ্রামে সাংবাদকদের সঙ্গে দোবির উদ্দিনের স্ত্রী সেলিনা খাতুন, দোবির উদ্দিনের দুই মেয়ে, দোবির উদ্দিনের বড় মেয়ের স্বামী শাজাহান আলী, দোবির উদ্দিনের বাবা আব্দুল খালেক, মাগুড়াবিনোদ ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর চর হামকুড়িয়া ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য বেলায়েত হোসেনসহ ঐ গ্রামের অনেকের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে দোবির উদ্দিনের বড় মেয়ে জানান, আনুমানিক ১১ বছর বয়স থেকে তার বাবা তাকে ধর্ষণ করতে শুরু করে। আর এসব কথা কাউকে বলে দিলে তাকে প্রাণে মেরে ফেলার ভয় দেখাতো। মেয়েটিকে বোঝানো হতো যে বিয়ের আগে এসব শিখতে হয়, নয়তো স্বামীর বাড়িতে খুব কষ্ট হবে। কী সঠিক আর কোনটা বেঠিক অসহায় মেয়েটি তা বুঝতে পারতো না। প্রাণ ভয়ে কাউকে কিছু না বলে অধিকাংশ সময় একদম একা চুপচাপ থাকতো।
দোবির উদ্দিনের বড় মেয়ে আরও জানান, তার বাবার বিকৃত যৌন লালসার শিকার হয়ে সে একবার সন্তান ধারণ করেন। তারপর তার বাবা তাদের গ্রামের আজাজুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির কাছে নিয়ে যায়। তিনি তখন ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করতেন। তার বাবা আজাজুলের কাছে বলেন, আমার মেয়ে একটা ছেলের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে মা হতে চলেছে। কিন্তু এসব জানাজানি হলে মান সন্মান কিছুই থাকবে না। আমার মেয়ের বিয়ে হবে না। তখন মানবিক দিক বিবেচনা করে আজাজুল কোনো এক ক্লিনিকে নিয়ে তার গর্ভপাত করে দেন। এসব কথা বলতে বলতে মেয়েটি অঝোরে কাঁদতেছিলো। এক পর্যায়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে।
ছোট মেয়েটি জানায়, এসব কথা কাউকে বলে দিলে তার বাবা তাকে হাঁসুয়া দিয়ে জবাই করার ভয় দেখিয়েছে।
দোবির উদ্দিনের বড় মেয়ের স্বামী শাজাহান আলী বলেন, আমার ফোনে অটো রেকর্ড চালু করা আছে, আমার শ্বশুর সেটা জানতেন না। আমার স্ত্রী সংসার ভেঙে যাওয়ার ভয়ে কখনও নিজে থেকে আমাকে কিছুই বলেনি। তাছাড়া বিয়ের আগে যাই ঘটুক সেটা আমার স্ত্রীর সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে। আমি কল রের্কড শোনার পর আমার স্ত্রী সব খুলে বলেছেন। ওর কোনো দোষ নেই। ও ভাগ্যের নির্মম পরিহাসের শিকার মাত্র। বরং তার দুঃথ ও কষ্টের কথা শুনে আমি নিজের চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি।
দোবির উদ্দিনের স্ত্রী সেলিনা খাতুন বলেন, গ্রামের একটি পুকুর পাড়ে ফাঁকা জায়গায় তাদের বসতঘর। অভাব অনটনের সংসার। আমি দিন মজুরের কাজ করতে গেলে বা কোনো কারণে বাড়িতে না থাকলে তার স্বামী তার দুই মেয়ের সাথে ওসব করতেন, আমি জানতাম না। মেয়েরা কখনও আমাকে জানায়নি।
দবির উদ্দিনের বাবা আব্দুল খালেক (৬৩) বলেন, এ ঘটনা জানাজানি হলে তার বড় নাতনি (দোবির উদ্দিনের বড় মেয়ে) আমার কাছে বিচারের দাবি করে। কিন্তু আমার ছেলে দিন মজুরের কাজে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে পালিয়েছে।
মাগুড়াবিনোদ ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর চর হামকুড়িয়া ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য বেলায়েত হোসেন বলেন, এ ঘটনার কারণে আমরা বাবারা সন্তানের কাছে লজ্জায় পড়েছি। তিনি আইন অনুযায়ী অপরাধীর সর্বোচ্চ সাজার দাবি তুলেছেন।
তাড়াশ থানা ওসি মো. ফজলে আশিক বলেন, এ ঘটনার অভিযোগ নিয়ে এখনও কেউ থানায় আসেনি।