সিলেটে ফের সরব প্রার্থীরা
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ আগস্ট ২০২১, ১২:৪৪:৩৪
প্রচারণার শেষ দিনে উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত করা হয়েছিলো সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচন। মহামারি করোনার ব্যাপক সংক্রমণের কারণে ভোটগ্রহণ স্থগিতের নির্দেশ দেয়া হয়েছিলো। সব প্রস্তুতি থাকার পরও নির্বাচন কমিশন নির্বাচন স্থগিত রাখেন। এখন নির্বাচন কমিশনের বাধ্যবাধকতার কারণে আগামী ৭ই সেপ্টেম্বরের মধ্যে ভোটগ্রহণ করতে হবে কমিশনকে। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে হতে যাচ্ছে ভোটগ্রহণ।
এদিকে, নির্বাচন স্থগিত করার পর নীরব হয়ে ছিলেন মাঠে থাকা ৪ প্রার্থী। এরা হলেন- আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব, জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিক, স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বিএনপি দলীয় সাবেক এমপি শফি আহমদ চৌধুরী এবং বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী জুনায়েদ মো. মিয়া। তবে সেপ্টেম্বরের নির্বাচনকে সামনে রেখে এখন ভিন্ন কৌশলে মাঠে সরব প্রার্থীরা। বিশেষ করে সামাজিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তারা ভোটারের কাছাকাছি যাচ্ছেন।
আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থকরা জানিয়েছেন- নির্বাচন স্থগিত হলে দলীয় প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব মাঠ ছাড়েননি। তিনি দলীয় ব্যানারে আসনের তিনটি উপজেলায় শোকসভাসহ নানা সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন। এতে করে নৌকার কর্মী সমর্থকদের কাছাকাছি রয়েছেন তিনি। নানা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তিনি উন্নয়নের প্রতীক নৌকার পক্ষে মাঠে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানাচ্ছেন। ১লা আগস্ট থেকে শুরু হয়েছে শোকের মাস।
আসনের তিনটি উপজেলার ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলার আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের কর্মসূচিতে যোগ দিচ্ছেন নৌকার প্রার্থী। এ ছাড়া অসুস্থ নেতাকর্মী ও কেউ মারা গেলে তার জানাজায়ও উপস্থিত হচ্ছেন তিনি। গত সোমবারও ফেঞ্চুগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন হাবিব। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ঋষিকেশ দেব রন্টুর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক লোকমান আহমদের পরিচালনায় সভায় হাবিব বলেন- জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম না হলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা অনস্বীকার্য।
সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন- জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এডভোকেট মশাহিদ আলী, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এ.আর সেলিম চৌধুরী, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শওকত আলী, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বাসিত টুটুল, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য রাহাত তরফদার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সিরাজুল ইসলাম, রাজু আহমদ রাজা, মিসবাহ চৌধুরী, যুগ্ম সম্পাদক শাহ মুজিবুর রহমান জকন, দপ্তর সম্পাদক মাহফুজুর রহমান জাহাঙ্গীর প্রমুখ।
এদিকে গতকালও হাবিব কয়েকটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি এসব আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে উপস্থিত থাকায় ক্রমেই তার অবস্থান সুসংহত হচ্ছে। ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ মুজিবুর রহমান জকন জানিয়েছেন- নৌকার মনোনয়ন পাওয়ার পর হাবিবুর রহমান হাবিব এখন সিলেট-৩ আসনে শেখ হাসিনার প্রতিনিধি। হাবিবুর রহমান হাবিবও দলীয় নেতাকর্মীদের ডাকে সাড়া দিয়ে দলীয় কর্মসূচিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন।
নির্বাচন স্থগিত হলেও মাঠ ছাড়েননি জাতীয় পার্টির প্রার্থী ও দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য আতিকুর রহমান আতিক। এবারের নির্বাচনে তিনি ঢাকা থেকে এসে বসবাস করছেন নিজ বাড়ি মোগলাবাজারে। ফলে এলাকার মানুষের কাছাকাছিও থাকছেন তিনি। এবারের উপনির্বাচন আতিকের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ- ১৯৯১ সাল থেকে আতিক এ আসনে প্রার্থী হচ্ছেন; কিন্তু জয়ের দেখা পাননি এখনো। এবার করোনাকালের এই নির্বাচনেও আতিক শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস দিয়েছেন। ভোটের আগে তিনি আওয়ামী লীগের কর্মীদের বিরুদ্ধে হুমকি-ধমকির অভিযোগ তুলেছিলেন। কিন্তু নির্বাচন স্থগিত হওয়ার পর সেই দৃশ্য আর থাকেনি। তবে- নির্বাচন স্থগিত হওয়ার পরও আতিক দলীয় নেতাকর্মী ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেছেন। ভোটের মাঠকে সক্রিয় রাখার চেষ্টা করছেন। গত তিনদিন ধরে ফের সামাজিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন আতিকুর রহমান আতিক।
গত সোমবার সন্ধ্যায় দক্ষিণ সুরমার জালালপুরে প্রবাসী জাতীয় পার্টি নেতা এজমান আলীর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এরআগে তিনি দিনভর দক্ষিণ সুরমার জালালপুর, লালাবাজার ও তেতলী ইউনিয়নে জনসাধারণের মাঝে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ করেন।
আতিক বলেছেন- বর্তমান সময়ে করোনা থেকে বাঁচতে হলে জনগণকে সচেতন করা ছাড়া বিকল্প কিছু নেই। সচেতনতাই মানুষকে এ মহামারি থেকে পরিত্রাণ দিতে পারে। এজন্য ঘরের বাইরে বের হলেই বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরিধান করতে হবে। তবে- আতিককে নিয়ে গত সোমবার রাতে দাউদপুর ইউনিয়ন জাতীয় পার্টির উদ্যোগে নির্বাচনী সভায় দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা যায়। ওই সভায় প্রার্থীর আচরণের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে সভাস্থলেই সভার সভাপতি মো. দেলোয়ার হোসেন পদত্যাগ করেন। দেলোয়ার মোগলাবাজার থানা জাতীয় পার্টির সভাপতি। এ ছাড়া মোগলাবাজার থানা জাতীয় পার্টির যুগ্ম সম্পাদক মনছুর আহমদও পদত্যাগ করেন। একই সঙ্গে তিনি আতিকুর রহমান আতিককে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করেন।
থানা জাতীয় পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনছুর আহমদ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন- জাতীয় পার্টির প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিক তার ইচ্ছেমতো নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। গত শুক্রবার জুমার নামাজের পর দাউদপুর ইউনিয়নে কয়েকটি নির্বাচনী সভা ছিল। কিন্তু আতিক জাতীয় পার্টির কাউকে কিছু না জানিয়েই সভা বাতিল করেন। তবে- গতকাল এক বিবৃতিতে নেতাকর্মীদের ধৈর্য ধারণের আহ্বান জানিয়েছেন জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি কুনু মিয়া।
এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী শফি আহমদ চৌধুরী সামাজিক অনুষ্ঠানেও অংশ নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তার কর্মী সমর্থকরা।