যুক্তরাজ্যে বৃটিশ-বাংলাদেশি সাদিয়ার কোভিড নিরোধক স্প্রে ‘ভলটিক’ আবিষ্কার
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ জুলাই ২০২১, ৮:২৪:৫০
মুহাম্মদ শাহেদ রাহমান ( লন্ডন) যুক্তরাজ্য থেকে : যুক্তরাজ্যে বৃটিশ-বাংলাদেশি বিজ্ঞানী সাদিয়া খানম কোভিড নিরোধক স্প্রে ‘ভলটিক’ আবিষ্কার করে বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন।
আবিষ্কারের সাথে সাথে ইতোমধ্যে তিনি ১০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি মূল্যের অর্ডার পেয়েছেন।
সাদিয়ার আবিষ্কৃত কোভিড নিরোধক ‘ভলটিক’ স্প্রে ব্যবহারের সফলতা ও কার্যকারিতা :
এনএইচএস যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতাল ও কেয়ার হোমে পরীক্ষামূলকভাবে এই স্প্রে ব্যবহার করে সফল হয়েছে।
নাসার ল্যাবে এটি ব্যবহার হচ্ছে। বিশ্বের ১৩টি দেশ ইতোমধ্যে ওই স্প্রে অর্ডার করেছে।
তাছাড়া মেডিকেল যন্ত্রপাতি, হোটেল, মোটেল, রেস্টুরেন্ট, এয়ারলাইন্স ইন্ডাষ্ট্রি, আর্ম ফোর্সেস, নিউক্লিয়ার স্টেশনে সাদিয়ার আবিষ্কৃত স্প্রে ব্যবহার করা যায়।
ভলটিক নামক এই স্প্রে যেকোনো স্থানে ব্যবহারের সাথে সাথে সবধরনের প্যাথোজন (ভাইরাস, ভ্যাক্টেরিয়া, ফাঙ্গি ইত্যাদি) টেনে এনে মেরে ফেলতে সক্ষম।
কোনো স্থানে একবার ব্যবহার করলে ১৫দিন পর্যন্ত ওই জায়গা সম্পুর্ণরূপে কোভিডমুক্ত থাকে।
যুক্তরাজ্যের হাসপাতালগুলো বলেছে, ভাইরাস নিরোধে এই স্প্রে শতভাগ কার্যকর।
তাছাড়া এই স্প্রে ব্যবহার করে হাসপাতালগুলোর প্রায় ৭০ ভাগ পরিচ্ছন্নতা খরচ কমিয়ে আনা সম্ভব। খবর: মানচেস্টার ইভনিং নিউজ।
সাদিয়ার গবেষণার সংকল্প :
সাদিয়ার যখন ১৪ বছর তখন তার দাদা আলজাইমার রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। তখন তিনি সংকল্প করেন, বড় হয়ে বিজ্ঞানী হবেন এবং আলজাইমার রোগের প্রতিষেধক আবিষ্কার করবেন। সেই শিশুকাল থেকেই তিনি বিজ্ঞানের প্রতি ঝুঁকে পড়েন। অবশেষে একজন বিজ্ঞানী হয়ে বিশ্বব্যাপী করোনাকালীন বৈরী সময়ে কিছুটা হলেও আশার বাণী শোনালেন।
সাদিয়ার শিক্ষাজীবন :
সাদিয়া খানম মানচেষ্টারের হলিক্রস সিক্সথ ফর্ম কলেজ থেকে জিসিএসই পাশ করেন । তারপর মানচেস্টার ইউনিভার্সিটি থেকে বায়ো-মেডিকেলে গ্রাজুয়েশন শেষ করেন । চেস্টার ইউনিভার্সিটি থেকে জেনেটিক্সে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন। তারপর তিনি স্বপ্ন বাস্তবায়নে আলজাইমার ও নিউরোডিজেনারেশন নিয়ে গবেষণা শুরু করেন।
সাদিয়ার কোভিড নিরোধক স্প্রে ‘ভলটিক’ আবিষ্কারের ইতিকথা:
২০২০ সালের ২৩ মার্চ করোনা মহামারির কারণে যুক্তরাজ্যে লকডাউন শুরু হলে আপাতত গবেষণা স্থগিত রেখে চেশিয়ারে তার বাবার রেস্টুরেন্ট ‘ক্যাফে ইন্ডিয়াতে’ কাজ শুরু করেন।
যেহেতু সারাবিশ্ব কোভিডে জর্জরিত তাই তিনি রেস্টুরেন্টে কাজের পাশাপাশি কোভিড নিরোধক কিছু আবিষ্কার করতে গবেষণা শুরু করেন। রেস্টুরেন্টকে তিনি কেস স্টাডি হিসেবে ব্যবহার করেন। প্রায় ১৪ মাসের গবেষণার পর একসময় সাফল্য ধরা দেয়। তিনি আবিষ্কার করে ফেলেন বিশেষ স্প্রে ‘ভলটিক’। এরপর কলিন হেইগান নামক একজন সিনিয়র বিজ্ঞানীকে সঙ্গে নিয়ে এই স্প্রেকে আরো ডেভোলপ করেন। কলিন হেইগান সাদিয়ার এই আবিষ্কার যুগান্তকারী বলে উল্লেখ করেন।
এক প্রতিক্রিয়ায় সাদিয়া খানম বলেন, তিনি অত্যন্ত আনন্দিত যে তার এই স্প্রে বিশ্বজুড়ে ব্যবহার হবে। শুধু অর্থ উপার্জনই বড় কথা নয়; এটা মানুষকে কোভিডমুক্ত জীবনযাপনে সাহায্য করবে।
স্প্রে থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে তিনি আলজাইমার রোগের ওপর অধিকতর গবেষণা করবেন এবং বিশ্বকে এই রোগের প্রতিষেধক দিতে পারবেন বলে আশাবাদী।
উল্লেখ্য, বিজ্ঞানী সাদিয়া খানমের পরিবার যুক্তরাজ্যের চেস্টারে বসবাস করেন। তিন ভাই-বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। বাবা কবির আহমদ রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী। মা ফরিদা আহমদ গৃহিনী। তার দাদা আজমত আলী যুক্তরাজ্যে আসেন ১৯৬৪ সালে।
সাদিয়ার বাবার বাংলাদেশের বাড়ি সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার নাজির বাজার এলাকার মোহাম্মদপুর গ্রামে।