সিলেটে আইনজীবী স্বামীকে ঘুমের ট্যাবলেট খাইয়ে হত্যা করেন শিপা
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ জুন ২০২১, ১২:১৩:৫০
সিলেটে আইনজীবী আনোয়ার হোসেন হত্যা মামলায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন তার স্ত্রী শিপা বেগম। রোববার বিকেলে তিনি সিলেট মূখ্য মহানগর হাকিম সাইফুর রহমানের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন তিনি।
জবানবন্দিতে পরকীয়া প্রেমের জেরে স্বামী আনোয়ার হোসেনকে ঘুমের ট্যাবলেট খাইয়ে হত্যা করেছেন বলে জানান শিপা।
গত ৩০ এপ্রিল ভোরে আনোয়ার হোসেনের মৃত্যুর বিষয়টি জানতে পারে তার পরিবার। এরপর স্বাভাবিক মৃত্যু ধরে নিয়ে তাকে সমাধিস্থ করা হয়। এরপর গত ১ জুন সন্দেহের বশে আনোয়ার হোসেনের মৃত্যুর ঘটনায় হত্যা মামলা দায়ের করে পরিবার। মামলায় আনোয়ারের স্ত্রী শিপা বেগম ও তার বর্তমান স্বামী শাহজাহান চৌধুরীসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করা হয়।
মামলা দায়েরের পর ৩ জুন শিপা বেগমকে নগরের তালতলা বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এর পরদিন আদালতের মাধ্যমে তাকে ৫ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। রিমান্ডে শিপার পরকীয়া প্রেমের তথ্য জানতে পারে পুলিশ। রিমান্ড শেষে রোববার তাকে আদালতে হাজির করা হলে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
আদালতে শিপা বেগমের জবানবন্দির বরাত দিয়ে সিলেট মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ বলেন, পরকিয়া জেরে আইনজীবী আনোয়ার হোসেনকে হত্যা করেন শিপা। খালাতো ভাই শাহজাহান চৌধুরী মাহির সাথে তার প্রেম ছিলো। মাহির যোগসাজশে শিপা বেগম ঘুমের ট্যাবেলেট খাইয়ে তার স্বামীকে হত্যা করার কথা আদালতে স্বীকার করেছেন। তারা ২৮ এপ্রিল ঘুমের ওষুধ কিনে আনেন। এরপর ২৯ এপ্রিল রাতে আনোয়ার হোসেনকে ১০টি ঘুমের ওষুধ খাওয়ান। পরদিন তিনি মারা যান।
এ মামলার অপর আসামি শাহজাহান চৌধুরী মাহি এখনও পলাতক রয়েছেন। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী এএসএম আব্দুল গফুর জানান, নিহত আনোয়ার হোসেনের অগোচরে স্ত্রী শিপা বেগমের পরকীয়া সম্পর্ক চলছিলো শাহজাহান চৌধুরী মাহি নামের একজনের সাথে। এর জেরেই আনোয়ার হোসেনকে হত্যা করা হয়।
নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত ৩০ এপ্রিল বিকেল ৩টার দিকে স্ত্রী শিপ্রা বেগম সবাইকে জানান, আনোয়ার হোসেন ডায়াবেটিস নীল হয়ে মারা গেছেন। পরে তাকে নিজের গ্রামের বাড়ি সিলেট সদর উপজেলার শিবেরবাজারের দীঘিরপার গ্রামে দাফন করা হয়।
পরবর্তীতে আনোয়ার হোসেনের পরিবার জানতে পারে, পরকীয়ার জেরে আনোয়ার হোসনকে হত্যা করেন স্ত্রীসহ কয়েকজন মিলে। এ ঘটনায় ১ জুন সিলেটের অতিরিক্ত চিফ মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হত্যা মামলার আবেদন করেন আনোয়ার হোসেনের ভাই মনোয়ার হোসেন। পরে আদালতে শুনানি শেষে কোতোয়ালি থানার ওসিকে ৩০২ ধারায় মামলা রুজু করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন বিচারক।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ইয়াছিন আলী জানান, আনোয়ার হোসেন মারা যাওয়ার মাত্র ১০ দিনের মাথায় শিপা বেগম তার খালাতো ভাই কানাইঘাটের বাসিন্দা (বর্তমানে নগরের উপশহর এলাকায় বসবাসকারী) শাহজাহান চৌধুরী মাহিকে বিয়ে করেন। এরপর থেকে আনোয়ারের পরিবারের সঙ্গেও শিপা যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। এ থেকে তাকে সন্দেহ করছে আনোয়ারের পরিবার।
উল্লেখ্য, গত ২ জুন রাতে অ্যাডভোকেট আনোয়ার হোসেন হত্যা মামলায় তার স্ত্রী শিপা বেগমকে সিলেট নগরীর তালতলা এলাকার একটি বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ৩ জুন দুপুরে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। এর আগে ১ জুন থানায় মামলা দায়ের করেন নিহতের ভাই, সিলেট সদর উপজেলার শিবেরবাজারের দীঘিরপার গ্রামের বাসিন্দা মনোয়ার হোসেন।
মামলায় পরকীয়া প্রেমের জেরে আনোয়ার হোসেনকে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ করা হয়। এতে নিহতের খালাতো ভাই শাহজাহান চৌধুরী মাহিকে প্রধান আসামি ও নিহতের স্ত্রী শিপা বেগমকে দ্বিতীয় আসামি করা হয়। এছাড়া মোট ৮ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়।