করোনা: শতবর্ষী দবিরুল চৌধুরীকে মানবসেবার স্বীকৃতি দিলেন ব্রিটেনের রানি
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ অক্টোবর ২০২০, ৪:১৫:১৪
দবিরুল ইসলাম চৌধুরীর জন্ম ১৯২০ সালে সিলেটে। ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে উচ্চশিক্ষার আশায় ১৯৫৭ সালে ব্রিটেনে পাড়ি জমান
করোনাভাইরাস সংকটে দুর্গতদের জন্য তহবিল সংগ্রহে নেমে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শতবর্ষী ব্রিটিশ নাগরিক দবিরুল ইসলাম চৌধুরী।
তিনি রোজার মাসে পায়ে হেঁটে তহবিলের জন্য প্রায় সাড়ে চার লাখ পাউন্ড চাঁদা তোলেন। এ অসাধারণ কাজের জন্য তাকে ব্রিটেনের রানির বিশেষ সম্মানে ভূষিত করা হয়েছে।
তহবিলের জন্য লন্ডনের উপকণ্ঠে নিজের বাড়ির বাগানে প্রতিদিন ১০০ বার করে ৮০ মিটার পথ হাঁটেন তিনি । ২৬ এপ্রিল থেকে শুরু হয় তার এই কার্যক্রম, পুরো রোজার মাসে তিনি এই হাঁটা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন ওই সময়।
পূর্ব লন্ডনের বো এলাকার বাসিন্দা দবিরুল ইসলাম চৌধুরীকে অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার (ওবিই) পদক দেওয়া হয়েছে।
“এই দুর্লভ সম্মান পেয়ে আমি নিজেকে অত্যন্ত ভাগ্যবান বলে মনে করছি,” তিনি বলেন, “আমার অন্তরের অন্ত:স্থল থেকে সবার প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।”
রানি এলিজাবেথের জন্মদিন উপলক্ষে ব্রিটেনের সমাজ-জীবনে যারা বিশেষ ভূমিকা রাখেন প্রতিবছর তাদের সম্মান জানানোর রীতি রয়েছে।
চলতি বছর জুন মাসে এই সম্মাননা ঘোষণার পরিকল্পনা থাকলেও মহামারির সময় স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মী, অর্থদাতা ও স্বেচ্ছাসেবকদের এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য তা স্থগিত করা হয়।
গত রমজান মাসের পুরোটা সময় দবিরুল ইসলাম চৌধুরী রোজা রেখে প্রতিদিন তার বাড়ির পেছনের ৮০ মিটার বাগানে পায়ে হেঁটে মোট ৯৭০ বার চক্কর দিয়েছেন।
তার উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশ, ব্রিটেন ও আরও কিছু দেশের করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত মানুষের সহায়তার জন্য অর্থসাহায্য সংগ্রহ করা।
ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন টম মুর তার বাড়ির বাগানে পায়ে হেঁটে স্বাস্থ্য-কর্মীদের জন্য যেভাবে প্রায় সাড়ে তিন কোটি পাউন্ড চাঁদা তুলেছিলেন তা দেখে উৎসাহিত হয়েছিলেন দবিরুল চৌধুরী।
রোজার মাসের পুরোটা সময় তিনি একইভাবে পায়ে হেঁটে চার লাখ ২০ হাজার পাউন্ড সংগ্রহ করেন।
এর মধ্যে এক লাখ ১৬ হাজার পাউন্ড দেওয়া হয় স্বাস্থ্য বিভাগ এনএইচএস-কে। বাকি অর্থ ৫২টি দেশের ৩০টি দাতব্য প্রতিষ্ঠানে দান করা হয়।
দবিরুল ইসলাম চৌধুরীর এই প্রচেষ্টার প্রশংসা করে বিরোধী দল লেবার পার্টির প্রধান স্যার কিয়ার স্টার্মার বলেছেন, “আমাদের সবার কাছে তিনি প্রেরণার এক উৎস।”
বিবিসি বাংলার সঙ্গে সাক্ষাৎকারে দবিরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, তিনি ব্রিটেনের বাঙালি সমাজ, বয়স্ক সমাজ ও অভিবাসী সমাজের পক্ষ থেকে এই ওবিই পদক গ্রহণ করছেন।
জানান, সপ্তাহ দু’য়েক আগে রানির দপ্তর থেকে ওবিই পদক প্রাপ্তির চিঠি পেয়ে তিনি বেশ অবাকই হয়েছিলেন।
“আমরা যখন কোন একটা ভালো কাজ করি তখন বিশেষ কোন প্রাপ্তির কথা মাথায় রাখি না,” বলছিলেন তিনি, “তবু এই স্বীকৃতির জন্য আমি খুবই আনন্দিত।”
আর এই পদক তার জীবনের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে বিশেষ কোন পরিবর্তন আনবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন। তবে তার কাজ যদি অন্য কাউকে উৎসাহিত করে তবেই তিনি খুশি হবেন বলে জানালেন।
রানির পদক পাওয়ার পর তিনি যেসব দাতব্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্কিত সেগুলোর প্রতি মানুষের সমর্থন আরও বাড়বে বলে তিনি আশা করেন।
দবিরুল ইসলাম চৌধুরীর জন্ম ১৯২০ সালে সিলেটের দিরাইতে। ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে উচ্চশিক্ষার আশায় ১৯৫৭ সালে তিনি বিলেতের পথে পাড়ি জমান। এরপর সেন্ট অলবান্স শহরে বসবাস করেন এবং সেখানে একজন কমিউনিটি লিডার হিসেবে জনপ্রিয়তা লাভ করেন। উনিশশো একাত্তর সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধের সময়েও অর্থ সাহায্য সংগ্রহ করেছিলেন।