ধর্ষণের বিরুদ্ধে উত্তাল সিলেট
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ অক্টোবর ২০২০, ১২:৫৮:৫৫
ধর্ষণ, নারী নিপীড়নসহ বিচারহীনতার বিরুদ্ধে সাধারণ নাগরিকদের নিয়ে আন্দোলন শুরু করেছে ‘দুস্কাল প্রতিরোধে আমরা’। দেশজুড়ে চলমান ধর্ষণ-নিপীড়নের ঘটনার প্রতিবাদে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে নানা শ্রেণিপেশার মানুষ, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও নাগরিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
‘পথে নামো, আওয়াজ তোলো, অনাচার-অবিচার-নৃশংসতা, রুখে দাঁড়াও’ স্লোগানে বুধবার (৭ অক্টোবর) বিকেল ৪টায় সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে আয়োজিত গণজমায়েতে অংশ নেন নানা শ্রেণিপেশার মানুষ। হাতে ফেস্টুন মুখে স্লোগান। ‘নামলে পথে জনগণ, ধর্ষক করবে পলায়ন, ‘বুক পেতেছি, গুলি কর, বুকের ভেতর বইছে ঝড়’ নানা স্লোগানে মুখর হয়ে উঠে নগরের চৌহাট্টা ও এর আশপাশ এলাকা। গান, স্লোগান আর কথায় ধর্ষকদের দ্রুত বিচার ও তাদের মদদদাতাদের খোঁজে বের করার দাবি জানানো হয়।
এতে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সিলেট মহানগর কমান্ডের সাবেক কমান্ডার ভবতোষ রায়বর্মণ রানা, সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট এমাদউল্লাহ শহীদুল ইসলাম, বাংলাদেশ স্থপতি ইন্সটিটিউট সিলেট শাখার সভাপতি স্থপতি জেরিনা হোসেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপিড়ন বিরোধী আন্দোলনের নেত্রী ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জায়েদা শারমীন স্বাতী, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. নাজিয়া চৌধুরী, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন প্রতিরোধকল্পে অভিযোগ কমিটির সদস্য সচিব আফরিন আহমদ, সিলেট প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রশীদ রেনু, প্রত্নতত্ত্ব সংরক্ষক মোস্তফা শাহ জামান চৌধুরী বাহার, গণজাগরণ মঞ্চ সিলেটের মুখপাত্র দেবাশীষ, দেবু, আইনজীবী দেবব্রত চৌধুরী লিটন প্রমুখ।
নাগরিক আন্দোলনের সংগঠক আব্দুল করিম কিম ও রাজীব রাসেলের সঞ্চলনায় ধর্ষণ, অনাচার, অবিচার ও নৃশংসতা বিরোধী এই কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা জানান বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও। বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন এই কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করে। এছাড়া নগরনাট, ঊষাসহ বিভিন্ন সংগঠন নাটক ও প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক পরিবেশনা উপস্থাপন করে।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, ‘কোনো ধর্ষণের ঘটনা ঘটলে আমরা রাজপথে নামি। বিভিন্ন ব্যানারে মানববন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল করি। এরপর একসময় সব শান্ত হয়ে যায়। সমস্যার মূল উৎপাটন হয় না। ধর্ষণ, বিচারহীনতা, নৃশংসতাকে চিরতরে নির্মূল করতে সকল নাগরিককে এ বিষয়ে সোচ্চার হতে হবে। সবাইকে এর মর্ম অনুভব করতে হবে, রাস্তায় নামতে হবে।’ নারীর জন্য নিরাপদ জনপদ বিনির্মাণ, অনাচার, অবিচার ও নৃশংসতামুক্ত দেশ গঠনে সকল নাগরিককে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘সবাইকে পথে নামতে হবে। সবাই পথে নামুন, অশুভ শক্তি ধ্বংস হবে।’
‘দুস্কাল প্রতিরোধে আমরা’ আন্দোলনের সংগঠক আব্দুল করিম কিম বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, ‘পথে সবাইকে নামতে হবে। পথে নামুন। আমরা অশুভ সময় অতিক্রম করছি। প্রতিনিয়ত অন্যায়-অনাচার-অবিচার-নৃশংসতা আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমি’কে গ্রাস করছে। আমরা দেখছি আর হতাশায় ক্লিষ্ট হচ্ছি। এ পরিস্থিতির জন্য আমরা সবাই অভিযুক্ত।’ এটি থেকে উত্তরণ করা না গেলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদেরকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমরা এই দুষ্কাল উত্তরণে কিছুই করতে পারছিনা। যা করছি, তা ‘প্রসাধনী আন্দোলন’। দুর্বৃত্তদের সীমাহীন ঔদ্ধত্যের বিরুদ্ধে ‘প্রসাধনী আন্দোলন’ চলবে না। সম্মিলিতভাবে পথে একত্রে সবার দাঁড়াতে হবে। আওয়াজ দিতে হবে- থামাও অন্যায়-অনাচার-অবিচার-নৃশংসতা।’
আয়োজকদের পক্ষ দেবাশীষ দেবু পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে জানান, আগামী শুক্রবার বিকেল ৪টায় একই স্থানে, একই দাবিতে আবারও গণজমায়েত অনুষ্ঠিত হবে।