মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়ার ‘যোগ্যতা নেই কমলার’: ট্রাম্প
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ আগস্ট ২০২০, ১২:৫৬:০৮
আসন্ন মার্কিন নির্বাচনে প্রতিদ্ব›দ্বী জো বাইডেনের রানিং মেট কমলা হ্যারিসের ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে দাঁড়ানোর যোগ্যতা নিয়ে এবার বিতর্ক উসকে দিলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ।
বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি কমলার জন্মস্থান ও প্রার্থী হওয়ার ‘সাংবিধানিক যোগ্যতা’ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। যদিও, প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন এক প্রতিবেদনে ট্রাম্পের বক্তব্য বিশ্লেষণ করে, তিনি যে মিথ্যাচার করেছেন তা প্রমাণ করে দিয়েছে।
১৯৬৪ সালের ২০ অক্টোবর ক্যালিফোর্নিয়ার ওকল্যান্ডে জন্ম নেয়া কমলা হ্যারিসের বাবা জ্যামাইকান, মা ভারতীয়। নির্বাচিত হলে কমলা হবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কালো এবং এশীয়-আমেরিকান ভাইস প্রেসিডেন্ট। এর আগে, বছরের পর বছর ধরে রিপাবলিকান দলের হয়ে ট্রাম্প সাবেক ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার জন্মস্থান ও তার প্রেসিডেন্ট পদে দাঁড়ানোর যোগ্যতা নিয়ে মিথ্যাচার করে এসেছিলেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, আসন্ন নির্বাচনের আগে প্রায় একই কায়দায় তিনি রানিং মেট কমলা হ্যারিসকে নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টির মাধ্যমে প্রধান প্রতিদ্ব›দ্বী জো বাইডেনকে ঘায়েল করতে চাইছেন।
ডেমোক্র্যাট দলের এই নারী সিনেটরের যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে বসার ‘সাংবিধানিক যোগ্যতা আছে কিনা’ সম্প্রতি সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন ট্রাম্পের সমর্থক ও আইনের অধ্যাপক ইস্টম্যান। মার্কিন সংবিধানের দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ ও চতুর্দশ সংশোধনীর দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেছিলেন, কমলা হ্যারিসের জন্মের সময় তার বাবা-মার মধ্যে অন্তত একজনের যদি যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি না থাকে (উদাহরণ স্বরূপ, যদি সেসময় দু’জনেই শিক্ষার্থী বা ভ্রমণ ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করে থাকেন), তাহলে সম্ভবত তার ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে বসার ‘যোগ্যতা থাকে না।’ তবে ইস্টম্যানের এ তত্ত¡ উড়িয়ে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও আইনজীবীরা বলেছেন, কমলা হ্যারিসের জন্ম যুক্তরাষ্ট্রে হওয়ায়, ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচন ও দায়িত্ব পালনে সাংবিধানিকভাবে তার কোনো ধরনের বাধা নেই।
ট্রাম্প অবশ্য এত যুক্তির ধার ধারেননি। ইস্টম্যানের আপত্তি সম্বন্ধে ট্রাম্পের মন্তব্য জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘আমি শুনেছি যে ভাইস প্রেসিডেন্ট হতে যা যা প্রয়োজন তা নাকি তার (কমলা) নেই। যে আইনজীবী এটা লিখেছেন তিনি খুবই যোগ্যতাসম্পন্ন ও মেধাবী আইনজীবী।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটি খুবই গুরুতর বিষয়, আপনারা বলছেন, আরও অনেকে বলছেন যে তিনি (কমলা) সাংবিধানিকভাবে যোগ্যতা অর্জন করেননি, কারণ তিনি এ দেশে জন্মই নেননি।’
তবে, কমলার জন্মস্থান সম্পর্কে ট্রাম্পের করা মন্তব্য সঠিক নয় বলে জানিয়েছে সিএনএন।
এক প্রতিবেদনে তারা জানিয়েছে, বাবা-মা অভিবাসী হলেও কমলা হ্যারিসের জন্ম ক্যালিফোর্নিয়ার ওকল্যান্ডে। সুতরাং, জন্মসূত্রে তিনি একজন প্রকৃত নাগরিক এবং সেই হিসাবে তিনি ভাইস-প্রেসিডেন্ট বা প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব পালন করার জন্য সংবিধানের শর্ত পূরণ করেন। এটি নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। এ বিষয়ে নর্থ-ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির আইনের অধ্যাপক জুলিয়েট সোরেনসেন বলেন, ‘প্রেসিডেন্টের মতো ভাইস প্রেসিডেন্টেরও যোগ্যতার একই শর্ত। তাকে জন্মসূত্রে একজন মার্কিন নাগরিক হতে হবে, কমপক্ষে ৩৫ বছর বয়স হতে হবে এবং যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত ১৪ বছর বসবাস করতে হবে। এ সব যোগ্যতাই কমলা হ্যারিসের রয়েছে। সুতরাং, নির্বাচনে তার প্রার্থীতা নিয়ে কোন বিতর্কই থাকতে পারে না।’
প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালে বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ‘বার্থার’ আন্দোলনের জনপ্রিয় মুখপাত্রে পরিণত হয়েছিলেন ট্রাম্প। তিনি দাবি করেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রে নয়, ওবামা জন্মেছিলেন কেনিয়ায়। তার প্রচারণায় বিরক্ত হয়ে ওবামা এক সময় যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াইয়ে তার জন্মের সনদও প্রকাশ করেন। এরপর, গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারে নেমে চাপের মুখে আগের অবস্থান থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন ট্রাম্প। ওবামার জন্ম যে যুক্তরাষ্ট্রেই, এক বিবৃতিতে তিনি তা স্বীকারও করেন। সূত্র : টিওআই, সিএনএন।